roket suggestion bd প্রশ্নপ্রত্রের উত্তর- অনার্স ১ম বর্ষ-বাংলা বিভাগ

 


এখানে অনার্স প্রথম বর্ষের জন্য বাংলাদেশ এবং বাঙালির ইতিহাস সংস্কৃতি (বিষয় কোড: ২১১০০১) বইয়ের -বিভাগ এবং গ বিভাগ সম্ভাব্য প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর গাইডের মতো সাজিয়ে দিচ্ছি।
প্রতিটি উত্তরে যথেষ্ট তথ্য থাকছে যাতে নম্বর ও ১০ নম্বর পূর্ণ পাওয়া যায়।


-বিভাগ (সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর)


. ‘আলাউদ্দিন হোসেন শাহের রাজত্বকাল বাংলা সাহিত্যের স্বর্ণযুগ’ – সংক্ষেপে আলোচনা কর।

আলাউদ্দিন হোসেন শাহ (১৪৯৪১৫১৯) বাংলার সুলতানি আমলের একজন বিশিষ্ট শাসক। তাঁর রাজত্বকালকে বাংলা সাহিত্যের স্বর্ণযুগ বলা হয়, কারণ

  • পৃষ্ঠপোষকতা : তিনি কবি সাহিত্যিকদের আশ্রয় দিতেন।
  • গৌড়ীয় বৈষ্ণব সাহিত্য : চণ্ডীদাস, বিজয় গুপ্ত প্রমুখ কবিরা তাঁর আমলে অসাধারণ সাহিত্য রচনা করেন।
  • মঙ্গলকাব্যের প্রসার : এই সময় মঙ্গলকাব্যের বিকাশ ঘটে।
  • হিন্দু-মুসলিম ঐক্য : ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ফলে সাহিত্য চর্চা আরও উন্নত হয়।

তাঁর শাসনামলে বাংলা সাহিত্য তার শ্রেষ্ঠ বিকাশ লাভ করে।


. ‘বাঙালি একটি সংকর জাতি’ – আলোচনা কর।

বাঙালি জাতি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মিশ্রণে গঠিত।

  • প্রাক-আর্য জনগোষ্ঠী : অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, মুণ্ডা কোল জাতি ছিল প্রাচীন বাসিন্দা।
  • আর্যদের আগমন : খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ সালের দিকে আর্যরা অঞ্চলে আসে।
  • বিদেশি প্রভাব : গ্রিক, হুন, মোগল, তুর্কি, পাঠান প্রভৃতির আগমন ঘটে।
  • ধর্মীয় বৈচিত্র্য : হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, মুসলিমসহ বহু সম্প্রদায় এখানে বসতি স্থাপন করে।

ফলে বাঙালি জাতির মধ্যে বিভিন্ন জাতি, সংস্কৃতি ভাষার মিশ্রণ ঘটেছে। এজন্য বাঙালিকে সংকর জাতি বলা হয়।


. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত্রের ফলে বাংলার সমাজ অর্থনীতিতে কী অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল?

১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিস বাংলায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন। এর ফলে

অর্থনৈতিক প্রভাব

  • জমিদাররা অল্প সময়ে ধনী হলেও কৃষকরা নিঃস্ব হয়ে পড়ে।
  • রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থ জমিদারদের সম্পত্তি নিলামে বিক্রি হয়।
  • কৃষকের ওপর অমানবিক খাজনা চাপানো হয়।

সামাজিক প্রভাব

  • একদিকে জমিদার শ্রেণি সমৃদ্ধ হয়, অন্যদিকে কৃষক শ্রেণি দারিদ্র্যের শিকার হয়।
  • বিদ্রোহ সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বাংলার অর্থনীতি দুর্বল করে এবং কৃষক সমাজকে শোষণের শিকার করে তোলে।


. সম্রাট আকবরের ধর্মনীতির পরিচয় দাও।

মোগল সম্রাট আকবর (১৫৫৬১৬০৫) তাঁর উদার ধর্মনীতি জন্য বিখ্যাত।

  • ধর্মীয় সহিষ্ণুতা : তিনি হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টানসহ সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন।
  • জিজিয়া কর রহিত : হিন্দুদের ওপর আরোপিত জিজিয়া কর বাতিল করেন।
  • দীন--ইলাহি প্রবর্তন : ধর্মীয় সমন্বয়ের জন্য নতুন মতবাদ প্রচলন করেন।
  • হিন্দু অভিজাতদের উচ্চপদে নিয়োগ : রাজপুতদের প্রশাসনে অন্তর্ভুক্ত করেন।

তাঁর এই নীতির ফলে ভারতবর্ষে ধর্মীয় সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায় এবং সাম্রাজ্য সুসংহত হয়।


. প্রাচীন বাংলার জনপদসমূহের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

প্রাচীন বাংলায় কয়েকটি প্রধান জনপদ ছিল

  • পুণ্ড্রবর্ধন : উত্তর বাংলায় অবস্থিত, রাজধানী মহাস্থানগড়।
  • বঙ্গ : দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল, প্রধান নগরী চট্টগ্রাম।
  • সমতট : সিলেট অঞ্চল, বন্দরনগরী সোনারগাঁও।
  • বিহার গৌড় : মধ্যবঙ্গ পশ্চিমবঙ্গ অঞ্চল, প্রশাসনিক কেন্দ্র গৌড়।

এই জনপদগুলোই পরবর্তীতে বাংলার সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক বিকাশের ভিত্তি স্থাপন করে।


. বাংলার বারো ভূঁইয়াদের পরিচয় তুলে ধর।

বারো ভূঁইয়ারা ছিলেন বাংলার স্বাধীনচেতা ভূস্বামী যোদ্ধা, যারা ১৬ শতকে মোগল শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

  • প্রধান নেতারা ছিলেন ঈশা খাঁ, মুসা খাঁ, চাঁদ খাঁ, বজল খান প্রমুখ।
  • তাঁরা বাংলার পূর্বাঞ্চলকে মোগলদের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য লড়াই করেন।
  • বিশেষত ঈশা খাঁর নেতৃত্বে ভূঁইয়ারা বহু যুদ্ধ জয় করেন।

তাঁদের এই সংগ্রাম বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়


. পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা রাজা গোপালের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

রাজা গোপাল (৭৫০৭৭০ খ্রি.) বাংলার পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা।

  • ক্ষমতায় আরোহণ : ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে গোপাল পাল রাজ্যাভিষিক্ত হন।
  • রাজধানী : তাঁর রাজধানী ছিল মগধ গৌড়।
  • শাসননীতি : তিনি প্রশাসন সুসংগঠিত করেন এবং শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেন।
  • ধর্মপ্রীতি : বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

তাঁর রাজত্বে বাংলায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।


. ‘মাৎসন্যায়বলতে কী বুঝ? সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

মাৎসন্যায় অর্থাৎবড় মাছ ছোট মাছকে খায়

  • প্রাচীন বাংলায় যখন কেন্দ্রীয় শাসন দুর্বল হয়ে পড়ত, তখন শক্তিশালী রাজারা দুর্বল রাজ্য দখল করত।
  • সময় ছোট জমিদার প্রজারা শোষণের শিকার হত।
  • রাজনৈতিক অস্থিরতা, দাঙ্গা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতো।

মাৎসন্যায় ছিল প্রাচীন বাংলার অরাজকতা অস্থিতিশীলতার প্রতীক

৯।তমুদ্দুন মজলিসকী? ভাষা আন্দোলনে তমুদ্দুন মজলিসের ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তর:
তমুদ্দুন মজলিস ছিল একটি প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন, যা সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র কিছু বুদ্ধিজীবীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন প্রফেসর আবুল কাশেম
এর মূল উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বাংলা ভাষা, সাহিত্য সংস্কৃতি রক্ষার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া।

ভাষা আন্দোলনে তমুদ্দুন মজলিসের ভূমিকা:

  1. বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি:
    ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে তমুদ্দুন মজলিস প্রথম "পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হোক" স্লোগান তোলে।
  2. পুস্তিকা প্রকাশ:
    তারা "পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু" নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুস্তিকা প্রকাশ করে, যা আন্দোলনে বড় ভূমিকা রাখে।
  3. রাষ্ট্রীয় গণমানসে প্রভাব:
    তমুদ্দুন মজলিস ছাত্রসমাজ, বুদ্ধিজীবী সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে সোচ্চার করে তোলে।
  4. ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন:
    ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় ছাত্রদের সঙ্গে তমুদ্দুন মজলিস সক্রিয়ভাবে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়।

সারসংক্ষেপ:
তমুদ্দুন মজলিস ভাষা আন্দোলনের পথিকৃৎ সংগঠনগুলির মধ্যে অন্যতম। এর উদ্যোগেই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ভিত্তি শক্ত হয়েছিল।


১০। কৈবর্ত বিদ্রোহ কী? কৈবর্ত বিদ্রোহের কারণ ব্যাখ্যা কর।

উত্তর:
কৈবর্ত বিদ্রোহ বাংলার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ কৃষক বিদ্রোহ। এটি সংঘটিত হয় ১০৭৪ খ্রিস্টাব্দে রাজা বল্লাল সেন বাহুল সেনের আমলে। কৈবর্তরা মূলত পূর্ববাংলার নদীবাহিত এলাকার জেলে, মাঝি কৃষক শ্রেণির লোক ছিলেন।

বিদ্রোহের কারণ:

  1. অত্যধিক করের চাপ:
    পাল রাজাদের শাসনামলে কৃষকদের ওপর অত্যধিক কর চাপানো হয়, যা সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে।
  2. অবহেলা শোষণ:
    রাজদরবারে নিম্নশ্রেণির মানুষদের প্রতি তীব্র অবহেলা বৈষম্যমূলক আচরণ করা হতো।
  3. ধর্মীয় বৈষম্য:
    কৈবর্তদের নিম্নবর্ণের হওয়ায় ব্রাহ্মণ্যবাদী শাসকরা তাদের ধর্মীয়ভাবে অবহেলা করতেন।
  4. জলসম্পদ নিয়ন্ত্রণ:
    নদীবাহিত এলাকার সম্পদের ওপর রাজদরবার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে কৈবর্তরা বিদ্রোহে উদ্বুদ্ধ হয়।

ফলাফল:
কৈবর্ত নেতা দিব্য বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন এবং গৌড় রাজ্যের একাংশ কয়েক বছরের জন্য নিজেদের দখলে রাখতে সক্ষম হন। যদিও পরবর্তীতে পাল রাজারা বিদ্রোহ দমন করেন, তবুও এই বিদ্রোহ বাংলার সামাজিক রাজনৈতিক ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা।


১১। নিধিবাবুর টপ্পা গানের বিবরণ দাও।

উত্তর:
নিধুবাবু বা রামনিধি গুপ্ত (১৭৪১১৮৩৯) ছিলেন বাংলা টপ্পা গানের প্রবর্তক। তাঁর টপ্পা গান বাংলার সংগীত জগতে এক নতুন ধারা সৃষ্টি করে।

টপ্পা গানের বৈশিষ্ট্য:

  1. উত্থান-পতনময় সুর: সুরের ওঠানামা এবং তীক্ষ্ণ লয়ের জন্য টপ্পা গান বিশেষভাবে পরিচিত।
  2. প্রেম বিরহের প্রকাশ: নিধুবাবুর টপ্পাগুলিতে মূলত প্রেম, বিরহ, অনুরাগ আকুলতার আবেগ ফুটে ওঠে।
  3. ছন্দের বৈচিত্র্য: হিন্দুস্তানি সংগীতের প্রভাব থাকলেও তিনি বাংলার ছন্দ ভাষা ব্যবহার করে টপ্পাকে নিজস্ব রূপ দেন।
  4. জনপ্রিয় গান:কি যাইবাসি ছাড়িয়া আমার মননিধুবাবুর অন্যতম প্রসিদ্ধ টপ্পা।

সারমর্ম:
নিধুবাবুর টপ্পা বাংলা গানের ধ্রুপদী ধারায় এক অনন্য সংযোজন।


১২। মুসলিম স্থাপত্যকীর্তি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তর:
বাংলাদেশে মুসলিম শাসনামলে স্থাপত্যশিল্পে এক নতুন ধারা সূচিত হয়। মধ্যযুগীয় বাংলায় মসজিদ, মাদ্রাসা, মাজার প্রাসাদনির্মাণে মুসলিম শৈলীর প্রভাব স্পষ্ট দেখা যায়।

প্রধান বৈশিষ্ট্য:

  1. গম্বুজ মিনার: মুসলিম স্থাপত্যে গম্বুজের ব্যবহার ছিল অপরিহার্য।
  2. অলঙ্করণশৈলী: টেরাকোটার কারুকাজ ক্যালিগ্রাফির ব্যবহার প্রচলিত হয়।
  3. প্রসিদ্ধ নিদর্শন:
    • ষাট গম্বুজ মসজিদ (বাগেরহাট)
    • ছোট সোনা মসজিদ (চাপাইনবাবগঞ্জ)
    • কুসুম্বা মসজিদ (নওগাঁ)
    • খান জাহান আলীর মাজার (বাগেরহাট)

সারমর্ম:
বাংলার মুসলিম স্থাপত্যকীর্তি শিল্প, সংস্কৃতি ধর্মীয় ঐতিহ্যের এক অনন্য সংরক্ষণ।


১৩।পাহাড়পুর বিহার বাঙালি সংস্কৃতির উচ্চমান প্রমাণ করে।আলোচনা কর।

উত্তর:
পাহাড়পুর বিহার বা সোমপুর মহাবিহার (নওগাঁ) প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধবিহার। এটি পাল সম্রাট ধর্মপাল কর্তৃক নির্মিত হয়।

প্রমাণের কারণ:

  1. স্থাপত্যশৈলী: বিশাল আয়তনের বিহারের নকশা প্রমাণ করে যে সে যুগে বাঙালিরা উন্নত স্থাপত্যকলা সম্পর্কে জ্ঞান রাখত।
  2. শিক্ষা সংস্কৃতির কেন্দ্র: এখানে বৌদ্ধধর্মীয় শিক্ষা, শিল্প, ভাস্কর্য সাহিত্যচর্চার সমন্বয় ঘটত।
  3. আন্তর্জাতিক খ্যাতি: প্রাচীন চীন, তিব্বত নেপালের শিক্ষার্থীরাও এখানে পড়াশোনা করতেন।
  4. ইউনেস্কো স্বীকৃতি: আজও এটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃত।

সারসংক্ষেপ:
পাহাড়পুর বিহার প্রমাণ করে প্রাচীন বাংলায় শিক্ষা, শিল্প স্থাপত্যশিল্পের উচ্চমান বিদ্যমান ছিল।


১৪।দ্বৈতশাসনকী? বাংলায় দ্বৈতশাসনের ফলাফল আলোচনা কর।

উত্তর:
দ্বৈতশাসন হলো এমন এক শাসনব্যবস্থা, যেখানে একইসঙ্গে দুটি শক্তি একটি অঞ্চলের শাসন পরিচালনা করে। বাংলায় দ্বৈতশাসন চালু হয় ১৭৬৫ সালে, যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাবশাহী প্রশাসন একসঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে।

ফলাফল:

  1. প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা: দ্বৈত নিয়ন্ত্রণের ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটে।
  2. আর্থিক শোষণ: কোম্পানি রাজস্ব আদায় করলেও জনগণের সুরক্ষার দায়িত্ব নেয়নি।
  3. দুর্ভিক্ষ: ১৭৭০ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে প্রায় কোটি মানুষ মারা যায়, অথচ কোম্পানি সহায়তা দেয়নি।
  4. নবাবশাহীর অবসান: নবাবদের ক্ষমতা নামমাত্রে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

সারসংক্ষেপ:
দ্বৈতশাসন বাংলার অর্থনীতি, প্রশাসন সমাজজীবনকে ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল।


১৫। বাঙালির খাদ্যাভ্যাস পোশাকের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তর:
বাঙালির খাদ্যাভ্যাস:

  1. ধান মাছ নির্ভরতা: চাল মাছ বাঙালির প্রধান খাদ্য।
  2. ঋতুভিত্তিক খাবার: গ্রীষ্মে আম, কাঁঠাল, তরমুজ; শীতে পিঠা, খেজুরের রস বিভিন্ন সবজি।
  3. মিষ্টান্ন প্রিয়তা: রসগোল্লা, সন্দেশ, মিষ্টি দই প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালির গর্ব।

বাঙালির পোশাক:

  1. পুরুষদের পোশাক: লুঙ্গি, ধুতি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া।
  2. নারীদের পোশাক: শাড়ি, ওড়না, সালোয়ার-কামিজ।
  3. ঐতিহ্যবাহী পোশাক: জামদানি, মসলিন নকশিকাঁথা বাঙালির গৌরব।

১৬। কৃষিনির্ভর বাঙালি সমাজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পরিচয় বিবৃত কর।

উত্তর:
বাংলার সমাজ মূলত কৃষিনির্ভর। কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ঋতু উৎসব বাঙালির জীবনধারার অংশ।

প্রধান অনুষ্ঠানগুলো:

  1. নববর্ষ পহেলা বৈশাখ: নতুন বছরের শুরুতে কৃষকরা নতুন হিসাব খাতার সূচনা করে।
  2. নবান্ন উৎসব: নতুন ধান ওঠার পর কৃষকেরা ধানের নবান্ন রান্না করে আনন্দ উদযাপন করে।
  3. পিঠা-পুলির উৎসব: শীতকালে বিভিন্ন পিঠা তৈরি বাঙালির বিশেষ প্রথা।
  4. নৌকাবাইচ: বর্ষায় গ্রামীণ বাঙালির অন্যতম বিনোদন।

১৭। বাঙালি সংস্কৃতিতে ধর্মের প্রভাব আলোচনা কর।

উত্তর:
বাংলার সংস্কৃতি বিভিন্ন ধর্মীয় ঐতিহ্যের সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে।

ধর্মীয় প্রভাব:

  1. হিন্দুধর্মের প্রভাব: দুর্গাপূজা, কালীপূজা, রথযাত্রা ইত্যাদি উৎসব বাংলার সংস্কৃতিতে গভীরভাবে প্রোথিত।
  2. ইসলামের প্রভাব: ঈদ, মাহররম, পীর-মাজার ভক্তি সুফি সংগীত বাংলার সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে।
  3. বৌদ্ধধর্মের প্রভাব: প্রাচীন বাংলার শিক্ষা শিল্পকলার বিকাশে বৌদ্ধধর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
  4. সমন্বয়ধর্মী সংস্কৃতি: ভিন্ন ধর্মের মানুষ একে অপরের উৎসবে অংশগ্রহণ করে, যা বাঙালি সংস্কৃতিকে বহুমাত্রিক করে তুলেছে।

গ. বিভাগ

১. বাংলায় সেন শাসনের অবসান ও মুসলমানদের আগমনের ইতিহাস সংক্ষেপে আলোচনা কর

ভূমিকা

ভারতের ইতিহাসে সেন যুগের অবসান এবং মুসলিম শাসনের সূচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। ১২শ শতাব্দীর শেষের দিকে বাংলায় সেন বংশের শাসন দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সুযোগে তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি বাংলায় অভিযান পরিচালনা করে। এর ফলে বাংলায় মুসলিম শাসনের সূচনা হয়।


সেন শাসনের অবসানের পটভূমি

১. সেন বংশের শাসনকাল প্রায় ১০৯৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২২৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলায় পাল বংশের পরে সেন বংশের শাসন ছিল।
২. গুরুত্বপূর্ণ রাজারা
বল্লাল সেন, লক্ষ্মণ সেন।
৩. অবসানের কারণসমূহ:

  • সেন রাজাদের বিলাসবহুল জীবনযাপন ও দুর্বলতা
  • প্রজাদের প্রতি উদাসীনতা
  • প্রশাসনিক দুর্বলতা
  • সীমান্ত প্রতিরক্ষার অভাব
  • মুসলিম সেনাদের দক্ষতা ও একতাবদ্ধতা

মুসলমানদের আগমনের কারণ

  • তুর্কি ও আফগান সেনাদের সামরিক শক্তি
  • উত্তর ভারতের মুসলিম শাসনের বিস্তার
  • বাংলার সম্পদ ও সমৃদ্ধির আকর্ষণ
  • সেন রাজাদের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা

ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির বঙ্গবিজয়

  • ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ১৮ জন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে তিনি নদীয়া আক্রমণ করেন।
  • নদীয়ার রাজধানী রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়ে সেন রাজা লক্ষ্মণ সেন পূর্ববঙ্গে পালিয়ে যান।
  • অল্প সময়েই গৌড়, রাজমহল, এবং উত্তর বাংলার অধিকাংশ অঞ্চল মুসলমানদের অধীনে আসে।

ফলাফল

  • বাংলায় মুসলিম শাসনের সূচনা
  • নতুন প্রশাসনিক কাঠামোর প্রবর্তন
  • আরবি-ফারসি ভাষা ও সংস্কৃতির প্রসার
  • হিন্দু ও মুসলিম সংস্কৃতির মেলবন্ধন

উপসংহার

সেন শাসনের অবসান বাংলার ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। মুসলিম আগমন শুধু রাজনৈতিক নয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও গভীর প্রভাব বিস্তার করে।


২. একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে যা জান

ভূমিকা

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা পরাজয় অনিবার্য জেনে পরিকল্পিতভাবে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করে। এই নৃশংস ঘটনা ইতিহাসে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত।


বুদ্ধিজীবী হত্যার পটভূমি

  • মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা স্বাধীনতার পক্ষে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা পালন করছিলেন।
  • পাকিস্তানি সেনারা বুঝতে পেরেছিল, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে এই শ্রেণিই দেশের নেতৃত্ব দেবে।
  • দেশকে মেধাশূন্য করতে তারা বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা করে।

ঘটনার বিবরণ

  • তারিখ: ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১
  • স্থান: ঢাকার রায়েরবাজার, মিরপুর, মহাখালী, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকা
  • ঘটনা:
    • আলবদর, আলশামস বাহিনীর সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা ডাক্তার, শিক্ষক, প্রকৌশলী, সাংবাদিকদের ধরে নিয়ে যায়।
    • তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়।

নিহতদের মধ্যে ছিলেন

  • ড. ফজলে রাব্বি
  • ড. মুনির চৌধুরী
  • সাংবাদিক সেলিনা পারভীন
  • কবি শহীদুল্লাহ কায়সার
  • আরও বহু খ্যাতিমান ব্যক্তি

ফলাফল

  • জাতি তার শ্রেষ্ঠ মেধাবীদের হারায়
  • স্বাধীনতার পর নতুন রাষ্ট্র গঠনে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়
  • ১৪ ডিসেম্বরকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা হয়

উপসংহার

বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড বাঙালি জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক অধ্যায়। এ ঘটনা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের গুরুত্ব আরও স্মরণ করিয়ে দেয়।

প্রশ্ন ৩

কলিঙ্গ যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পর্যালোচনা কর।

উত্তর:

প্রস্তাবনা

ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে সম্রাট অশোক ও কলিঙ্গ যুদ্ধ এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। খ্রিস্টপূর্ব ২৬১ সালে সংঘটিত এই যুদ্ধ শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেই নয়, মানবতার ইতিহাসেও স্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল। এই যুদ্ধে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে, যা পরবর্তীতে সম্রাট অশোকের জীবনে আমূল পরিবর্তন আনে।


কলিঙ্গ যুদ্ধের কারণ

  1. রাজনৈতিক কারণ
    • মৌর্য সাম্রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব সীমানায় অবস্থিত কলিঙ্গ ছিল একটি স্বাধীন ও সমৃদ্ধশালী রাজ্য।
    • সম্রাট অশোক ভারতবর্ষকে একীকরণের লক্ষ্যে কলিঙ্গকে দখল করতে চেয়েছিলেন।
  2. অর্থনৈতিক কারণ
    • কলিঙ্গ ছিল একটি সমুদ্রবাণিজ্য নির্ভর সমৃদ্ধ রাজ্য।
    • বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পেলে মৌর্য সাম্রাজ্যের সমুদ্রপথে বাণিজ্য শক্তিশালী হতো।
  3. প্রতিরোধ মনোভাব
    • কলিঙ্গ স্বাধীনতা রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল। মৌর্য সাম্রাজ্যের কর বা আধিপত্য মানতে রাজা অস্বীকৃতি জানান।
    • এর ফলে অশোক শক্তি প্রয়োগ করে কলিঙ্গ দখলের সিদ্ধান্ত নেন।

কলিঙ্গ যুদ্ধের ফলাফল

১. প্রাণহানি ও ধ্বংস

  • অশোকের শিলালিপি থেকে জানা যায়, যুদ্ধে প্রায় ১,০০,০০০ মানুষ নিহত, ১,৫০,০০০ মানুষ বন্দি এবং অসংখ্য মানুষ আহত হয়।
  • কলিঙ্গের সমৃদ্ধ নগরী ও গ্রামাঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

২. অশোকের জীবনে পরিবর্তন

  • এত ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ দেখে অশোক অনুশোচনায় ভুগতে থাকেন।
  • পরবর্তীতে তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে অহিংসা ও মানবকল্যাণের পথে অঙ্গীকারবদ্ধ হন।

৩. বৌদ্ধধর্মের প্রসার

  • কলিঙ্গ যুদ্ধের পর অশোক বৌদ্ধধর্মকে সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রধর্মে পরিণত করেন।
  • তিনি ভারতবর্ষসহ বিদেশে বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য দূত প্রেরণ করেন।

৪. সাম্রাজ্য নীতি পরিবর্তন

  • যুদ্ধবিরোধী নীতি গ্রহণ করে অশোক “ধর্মবিজয়” ধারণা প্রচলন করেন।
  • ভবিষ্যতে তিনি আর কোনো যুদ্ধ শুরু করেননি।

উপসংহার

কলিঙ্গ যুদ্ধ ভারতীয় ইতিহাসে এক মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। এই যুদ্ধ যেমন ভয়াবহ প্রাণহানি ও ধ্বংস ডেকে আনে, তেমনি সম্রাট অশোকের মানবতাবাদী নীতি ও বৌদ্ধধর্মের বিশ্বব্যাপী প্রসারের পথ সুগম করে।


প্রশ্ন ৪

ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির বঙ্গবিজয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর।

উত্তর:

প্রস্তাবনা

বাংলার ইতিহাসে মুসলিম শাসনের সূচনা ঘটে ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে। তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি তাঁর সীমিত বাহিনী নিয়ে বাংলার রাজধানী নদেরিয়ার সেন রাজাদের পতন ঘটিয়ে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।


বঙ্গবিজয়ের পটভূমি

  1. সেন সাম্রাজ্যের দুর্বলতা
    • লক্ষ্মণ সেনের শাসনামলে সেন সাম্রাজ্য অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে দুর্বল হয়ে পড়েছিল।
    • প্রশাসনিক দুর্বলতা ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা মুসলিম আক্রমণের পথ প্রশস্ত করে।
  2. তুর্কি শক্তির উত্থান
    • দিল্লির গৌড় অঞ্চলে মুসলিম শক্তি তখন প্রসার লাভ করছে।
    • বখতিয়ার খিলজি ছোট বাহিনী নিয়ে বাংলা অভিযানের পরিকল্পনা করেন।

বঙ্গবিজয়

  1. নদেরিয়া আক্রমণ
    • ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে প্রায় ১৮ জন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে বখতিয়ার নদেরিয়া আক্রমণ করেন।
    • লক্ষ্মণ সেন আকস্মিক আক্রমণে পরাস্ত হয়ে বিক্রমপুরে পালিয়ে যান।
  2. গৌড় দখল
    • নদেরিয়া দখলের পর বখতিয়ার গৌড়ের রাজধানী দখল করেন।
    • মুসলিম শাসনের প্রশাসনিক কেন্দ্র স্থাপিত হয়।

বঙ্গবিজয়ের ফলাফল

১. মুসলিম শাসনের সূচনা

  • বাংলায় প্রথমবারের মতো মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • ইসলাম প্রচারের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।

২. প্রশাসনিক পরিবর্তন

  • প্রথাগত হিন্দু প্রশাসন ভেঙে মুসলিম প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে ওঠে।

৩. সমাজ ও সংস্কৃতিতে প্রভাব

  • বাংলায় ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটে।
  • মুসলিম সংস্কৃতি, শিল্পকলা ও স্থাপত্য বাংলার সমাজে নতুন মাত্রা যোগ করে।

উপসংহার

ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির বঙ্গবিজয় বাংলার ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক মোড়। এর ফলে শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতার পরিবর্তন নয়, বাংলার সমাজ, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় কাঠামোতেও স্থায়ী প্রভাব পড়ে।


প্রশ্ন ৫

উনিশ শতকে বাংলার সমাজ সংস্কার ও শিক্ষা বিস্তারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা কর।

উত্তর:

প্রস্তাবনা

ঊনিশ শতকের বাংলায় সমাজে কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও সামাজিক বৈষম্য ব্যাপকভাবে বিস্তৃত ছিল। এই প্রেক্ষাপটে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন এক আলোকবর্তিকা, যিনি শিক্ষা, সমাজ সংস্কার ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রাখেন।


সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান

  1. বিধবা বিবাহ আন্দোলন
    • তৎকালীন সমাজে বিধবাদের জীবন ছিল দুর্বিষহ।
    • বিদ্যাসাগরের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৮৫৬ সালে বিধবা বিবাহ আইন পাশ হয়।
  2. বাল্যবিবাহ বিরোধিতা
    • বিদ্যাসাগর বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করেন।
    • বিভিন্ন প্রবন্ধ ও বক্তৃতার মাধ্যমে তিনি বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরেন।
  3. নারী শিক্ষার প্রসার
    • তিনি নারীদের শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে বহু নারী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
    • এর ফলে সমাজে নারী শিক্ষার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।

শিক্ষাক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের অবদান

  1. বাংলা ভাষার উন্নয়ন
    • বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যকে সহজ, প্রাঞ্জল ও সর্বজনগ্রাহ্য রূপ দেন।
    • তাঁর “বর্ণপরিচয়” বই বাংলা শিক্ষার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে।
  2. বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা
    • তাঁর প্রচেষ্টায় বাংলায় শতাধিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
    • ইংরেজি শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা শিক্ষার উপরও জোর দেন।

উপসংহার

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান শুধুমাত্র শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তিনি বাংলার ইতিহাসে এক নবজাগরণের প্রবর্তক। তাঁর কর্মফলেই ঊনিশ শতকের বাংলা নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হয়।

৬। ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও ভূমিকা ব্যাখ্যা কর

পটভূমি:
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারত বিভাজনের পর পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান দুই ভূ-ভাগে বিভক্ত ছিল – পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমান পাকিস্তান) ও পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ)। রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণের ক্ষেত্রে, পশ্চিম পাকিস্তানের আধিপত্য রক্ষা করার চেষ্টা চালানো হয়। ১৯৪৮ সালের ২৩ মার্চ, পাকিস্তানের গভর্নর-জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেন যে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু, যা পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭০% সংখ্যার জন্য অস্বাভাবিক ও বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ ছিল।

বাংলা ভাষাভাষী জনগণ এ অবস্থাকে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে দেখেছিল। তাই, ১৯৪৭–৫২ সালের মধ্যে শিক্ষার্থী, বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ জনগণ বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা নিশ্চিত করার চেষ্টা শুরু করে।

ভূমিকা:
ভাষা আন্দোলন কেবল ভাষার জন্যই নয়, বরং বাঙালি জাতীয় চেতনার উত্থানের মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছিল। এটি বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনা, জাতীয় স্বাতন্ত্র্যবোধস্বাধীনতার লড়াইকে প্রেরণা যুগিয়েছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে পুলিশী দমন ও আন্দোলনকারীদের শহীদ হওয়া, এক অনন্য জাতীয় প্রতীক হয়ে ওঠে।

ভাষা আন্দোলনের ফলাফল:

  1. ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
  2. বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের seeds বপন হয়।
  3. সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও বাঙালি চিন্তাধারার প্রসার ঘটে।

উপসংহার:
ভাষা আন্দোলন বাঙালির জন্য আত্মপরিচয়, ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে চিরস্মরণীয়। এটি স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম ধাপ ও বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনার ভিত্তি স্থাপন করে।


৭। 'বাংলা' নামের উদ্ভব ও বিবর্তন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

উদ্ভব:
‘বাংলা’ নামের উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। প্রাচীন ঐতিহাসিক ও ভাষাতাত্ত্বিক সূত্র অনুযায়ী:

  1. বঙ্গ শব্দ থেকে: প্রাচীনকালে মগধ ও কোরেশিয়ান সূত্রে বঙ্গ বা ‘বঙ্গদেশ’ নামে পরিচিত ছিল।
  2. বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি বাসিন্দাদের নাম থেকে: বঙ্গ অঞ্চল ও বঙ্গোপসাগরের সংযোগে এই নাম প্রচলিত হয়।
  3. সংস্কৃত সাহিত্য ও প্রাচীন পুরাণ অনুযায়ী, ‘বঙ্গ’ শব্দের অর্থ “সুন্দর দেশ” বা “নদীমাতৃক সমৃদ্ধ অঞ্চল”।

বিবর্তন:

  • প্রাচীনকাল: ৫ম শতাব্দী থেকে বঙ্গ অঞ্চল বিভিন্ন সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে পরিচিত। প্রাথমিক সাহিত্য ও শাসনকালের দলিলগুলোতে ‘বঙ্গদেশ’ বা ‘বঙ্গ’ শব্দ ব্যবহৃত হয়।
  • মধ্যযুগ: মুসলিম শাসনকালে ‘বঙ্গ’ শব্দ বহুল প্রচলিত। তৎকালীন মুসলিম ইতিহাস ও ভ্রমণকারীদের লেখায় বঙ্গের বর্ণনা পাওয়া যায়।
  • আধুনিক: ব্রিটিশ শাসনকালে ‘বাংলা’ শব্দটি ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির পরিচয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের পর এটি রাষ্ট্র ও জাতীয় পরিচয় হিসেবে চূড়ান্তভাবে স্বীকৃত হয়।

উপসংহার:
‘বাংলা’ নাম শুধু একটি ভৌগোলিক অঞ্চলকেই বোঝায় না, বরং এটি বাঙালির সাংস্কৃতিক, ভাষাগত ও জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক


৮। শশাঙ্ক কে ছিলেন? তাঁর শাসনকালের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

শশাঙ্কের পরিচয়:
শশাঙ্ক প্রাচীন ভারতের একটি প্রখ্যাত রাজা ছিলেন, যিনি প্রায় ৬ষ্ঠ শতকে গঙ্গা নদের পূর্বাঞ্চলে (বর্তমান বাংলা ও বিহারের অংশ) রাজত্ব করেছিলেন। তিনি মৌর্য-বংশাবলম্বী রাজত্বের পরবর্তী যুগে স্থাপিত “গুপ্তদের পূর্ববর্তী বাংলা সাম্রাজ্য” গড়েছিলেন।

শাসনকাল:

  • প্রায় ৫৯২–৬২২ খ্রিস্টাব্দ।
  • রাজত্বকালে শশাঙ্ক পূর্ববঙ্গ ও বিহারের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন।
  • তাঁর শাসনকালে বাঙালি সমাজে প্রশাসনিক স্থায়িত্ব, বাণিজ্যিক বিকাশ ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটে।

বিশেষ অবদান:

  1. বাঙালির রাজনীতি ও সামাজিক সংহতির উন্নয়ন।
  2. নদী ভেদি স্থাপত্য ও জলপথ বাণিজ্যের উন্নয়ন।
  3. সংস্কৃতি ও শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা।

উপসংহার:
শশাঙ্ক ছিলেন প্রাচীন বাংলার শক্তিশালী ও স্বতন্ত্র রাজা। তাঁর শাসনকাল বাঙালি ইতিহাসে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্থিতিশীলতার যুগ হিসেবে স্মরণীয়।


৯। বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের প্রভাব বিশদভাবে ব্যাখ্যা

পটভূমি:
১৯৬০–৬০-এর দশকে পূর্ব পাকিস্তান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্য অনুভব করছিল। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে অসন্তোষ ক্রমবর্ধমান। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান পূর্ব পাকিস্তানে একটি বৃহৎ জন-সাংঘর্ষ্য হিসেবে দেখা দেয়।

ঘটনাবলি:

  • শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রীয় অত্যাচার, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও রাজনৈতিক হিংসার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে।
  • ডেমোক্র্যাটিক অধিকার ও জাতীয় সংসদের পুনর্গঠন দাবি করা হয়।
  • প্রেসিডেন্ট এইহান সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে প্রভাব:

  1. রাজনৈতিক সচেতনতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে।
  2. পাকিস্তান সরকারের প্রতি জনমতের চাপ বৃদ্ধি পায়।
  3. ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিশাল জয় ও মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা প্রস্তুত হয়।

উপসংহার:
১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান বাঙালির রাজনৈতিক শক্তি ও সংহতির প্রকাশ। এটি পরবর্তীকালে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের জন্য মৌলিক প্রেরণা হিসেবে কাজ করে।


১০। বাঙালি জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ও বিকাশ

উদ্ভব:
বাঙালি জাতীয়তাবাদ মূলত ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে উদ্ভূত হয়।

  • মধ্যযুগে বাঙালি সমাজে আঞ্চলিক চেতনা ও স্বতন্ত্র সাহিত্য-সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।
  • ব্রিটিশ শাসনকালে শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রশাসনিক বৈষম্য বাঙালি জাতীয় চেতনার সূচনা করে।
  • ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রথম সংগতিশীল প্রকাশ।

বিকাশ:

  1. ভাষা আন্দোলন (১৯৪৮–১৯৫২): বাংলা ভাষার স্বীকৃতি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ চূড়ান্ত শক্তি লাভ করে।
  2. রাজনৈতিক আন্দোলন: ১৯৬৬ সালের ৬ দফা ও ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান বাঙালি রাজনৈতিক অধিকার ও স্বায়ত্তশাসনের দিকে লক্ষ্য স্থাপন করে।
  3. মুক্তিযুদ্ধ (১৯৭১): জাতীয়তাবাদ চূড়ান্ত রূপ পায় স্বাধীন বাংলাদেশের মাধ্যমে।

উপসংহার:
বাঙালি জাতীয়তাবাদ একটি ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। এটি বাঙালির ভাষা, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রগঠনের অধিকার রক্ষা এবং স্বাধীনতা অর্জনের জন্য কেন্দ্রীয় শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।

১১। মধ্যযুগের মুসলিম স্থাপত্যকলার পরিচয়

মধ্যযুগের মুসলিম স্থাপত্য বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি ১৩শ–১৮শ শতকে গড়ে ওঠে, বিশেষ করে সুলতান ও মুঘল শাসনকালে। মুসলিম স্থাপত্যে ইসলামী নকশা, স্থানীয় শিল্প ও সৌন্দর্যের সমন্বয় দেখা যায়।

প্রধান বৈশিষ্ট্য:

  1. মসজিদ ও মাদ্রাসা:
    • মসজিদ ছিল ইসলামী স্থাপত্যের প্রধান নিদর্শন।
    • উদাহরণ: শাহী জামে মসজিদ (গৌড়), ঈশা মসজিদ।
    • গম্বুজ (ডোম), মিনার, মেহরাব ও খিলানার নকশা মুখ্য।
  2. কোতোয়াল, দুর্গ ও দূর্গনগর:
    • রাজপ্রাসাদ ও দুর্গে ইসলামি স্থাপত্যের প্রভাব।
    • উদাহরণ: লক্ষ্মীপুরের নকশা ও ঢাকার লালবাগ কেল্লা।
  3. শিল্প ও অলঙ্করণ:
    • সোনার মোজাইক, টেরাকোটা, ভাস্কর্য ও কাঁথার নকশা।
    • বাংলার স্থানীয় পাথর ও ইট ব্যবহার করে জটিল জ্যামিতিক নকশা।

সারাংশ:
মধ্যযুগের মুসলিম স্থাপত্য ধর্ম, প্রশাসন ও শিল্পকলার সমন্বয়। এটি বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস ও শিল্পী চিন্তার প্রতিফলন


১২। বৈষ্ণব ধর্মমতের উদ্ভব ও বিকাশ

উদ্ভব:
বৈষ্ণব ধর্মমত মূলত ভগবত প্রেম ও ভগবানের উপাসনার উপর ভিত্তি করে। এটি ১৫–১৬ শতকে চৈতন্য মহাপ্রভুর (১৪৮৬–১৫৩৩) প্রচেষ্টায় বাংলায় শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বৈষ্ণব ধর্মের মূল উপাস্য ছিলেন কৃষ্ণ ও রাধা, যার মাধ্যমে প্রেম, ভক্তি ও সহনশীলতার বার্তা প্রচার করা হতো।

বিকাশ:

  1. ভক্তি আন্দোলন:
    • সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ও হৃদয়স্পর্শী ভক্তি প্রচলিত।
    • আঞ্চলিক ভাষায় কবিতা ও কীর্তন মাধ্যমে ধর্মীয় চেতনাকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
  2. সাংস্কৃতিক প্রভাব:
    • সংগীত, নাটক, পলাবিত, কীর্তন ও নৃত্যের মাধ্যমে সমাজে ধর্মীয় সচেতনতা বৃদ্ধি।
    • উদাহরণ: মঙ্গলকাব্য, পদাবলী।
  3. সামাজিক প্রভাব:
    • ধর্মীয় ভেদাভেদ হ্রাস ও সাম্যবাদী চেতনা প্রচার।
    • গরিব, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্মীয় সমতার ধারণা প্রতিষ্ঠা।

উপসংহার:
বৈষ্ণব ধর্মমত বাংলার সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে এবং মানুষের ভক্তি ও মানবিক মূল্যবোধ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।


১৩। বাংলার বাউল মতের উদ্ভব ও বিকাশের পটভূমি

উদ্ভব:
বাউল মত বাংলাদেশের লোকধর্ম ও সংস্কৃতির অংশ। এটি মধ্যযুগে বৈষ্ণব ও সুফি চেতনায় উদ্ভূত হয়। বাউলরা সমাজের ধর্মীয় ও সামাজিক বাধা অমান্য করে মানুষের ভেতরের প্রেম, মানবিকতা ও আত্মার মুক্তি প্রচার করতেন।

বিকাশ ও বৈশিষ্ট্য:

  1. সংগীত ও সাহিত্য:
    • বাউল গান মানুষের জীবনের আনন্দ-বেদনা, প্রেম ও ভক্তি প্রকাশ।
    • উদাহরণ: লালন ফকির, হিরণময়ী, মধুসূদন।
  2. দর্শন ও চেতনা:
    • মানবমুক্তি, ভগবানের প্রতি প্রেম ও আধ্যাত্মিক অনুসন্ধান।
    • সামাজিক সীমাবদ্ধতা ও ধর্মীয় ভেদাভেদ অগ্রাহ্য।
  3. সামাজিক প্রভাব:
    • সাধারণ মানুষের কাছে সহজবোধ্য ও হৃদয়স্পর্শী বাউল শিক্ষা।
    • গ্রামীণ সমাজে শান্তি, সহমর্মিতা ও মানবিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি।

উপসংহার:
বাউল মত বাংলার লোকসংস্কৃতি, সংগীত ও আধ্যাত্মিক চেতনার সমৃদ্ধি। এটি সমাজে মানবিকতা ও সমতার বার্তা প্রচার করে।


১৪। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের কারণ ও তার ফলাফল

কারণ:
১. রাজনৈতিক:

  • ব্রিটিশ সরকারের অন্যায় শাসন ও রাজত্বে হস্তক্ষেপ।
  • ভারতীয় সেনাদের অনাদায়ী ও প্রাচীন মর্যাদা লোপ।

২. সামাজিক:

  • ব্রিটিশ শাসনধারা হিন্দু-মুসলিম প্রথায় হস্তক্ষেপ।
  • ধর্মীয় অনুপ্রবেশ ও আচার-প্রথায় দমন।

৩. অর্থনৈতিক:

  • কৃষক ও শ্রমিকদের ওপর অতিরিক্ত কর।
  • সিপাহীদের বেতন ও সুবিধার অবহেলা।

৪. সামরিক:

  • কার্তুজ তৈরিতে গোবর ও চর্বি ব্যবহারের অভিযোগ।
  • সেনাদের ধর্মীয় অনুভূতির অবহেলা।

ফলাফল:

  • বিদ্রোহ বিফল হলেও ব্রিটিশ সরকার শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে।
  • ভারতীয় সমাজে স্বাধীনতার চেতনা প্রসারিত হয়।
  • সামরিক ও রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসন আরও কঠোর হয়।

উপসংহার:
১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ ভারতীয় জনগণের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও জাতীয় চেতনার প্রাথমিক প্রকাশ


১৫। বাঙালি মুসলমানদের জাগরণে মুসলিম সাহিত্য সমাজের ভূমিকা

পরিচয়:
মুসলিম সাহিত্য সমাজ ১৯০১ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমদের শিক্ষিত করা, সংস্কৃতিমূলক উন্নতি ও জাগরণ সৃষ্টি করা।

ভূমিকা:

  1. শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তার:
    • মাদ্রাসা ও স্কুল প্রতিষ্ঠা, শিক্ষার প্রসার।
    • সাধারণ মুসলিম জনগণ শিক্ষায় অগ্রসর হয়।
  2. সাহিত্য ও সংস্কৃতি:
    • মুসলিম ইতিহাস, সাহিত্য ও ধর্মীয় গ্রন্থ প্রকাশ।
    • উদাহরণ: রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলাম প্রভৃতি মুসলিম সাহিত্যিকদের সমর্থন।
  3. সামাজিক প্রভাব:
    • ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের উন্নয়ন।
    • নারী শিক্ষা, সমাজসেবা ও মানবিক মূল্যবোধ প্রচার।

উপসংহার:
মুসলিম সাহিত্য সমাজ বাঙালি মুসলমানদের শিক্ষাগত, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক জাগরণে অন্যতম প্রেরণার উৎস, যা পরবর্তীকালে মুসলিম জাতীয়তাবাদের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

 

Post a Comment

Previous Post Next Post